শিক্ষা মানুষের জ্ঞান অর্জনের একটি মাধ্যম। মানুষের জ্ঞানকে বিকশিত করার জন্য শিক্ষা ছাড়া কোন উপায় নেই। আমরা সকলেই ছোটবেলায় বইয়ের পাতায় কিংবা অন্যের মুখে শুনেছি “শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড”। মেরুদণ্ড ছাড়া মানুষ যেমন সোজা হয়ে দাড়াতে পারে না, তেমনি সুশিক্ষা ছাড়াও মানুষের জ্ঞানকে বিকশিত করা সম্ভব হয় না। কিন্তু বর্তমানে তরুণ সমাজ নৈতিক শিক্ষাব্যবস্থায় পিছিয়ে যাচ্ছে। নিজেদের জ্ঞানকে বিকশিত করার জন্য তারা এই পথে এসেও একসময় হারিয়ে যাচ্ছে। তরুণদের হারিয়ে যাওয়ার পিছনে রয়েছে রহস্যময় ইতিহাস। কালের বিবর্তনে শিক্ষাব্যবস্থায় পরিবর্তন হয়েছে অনেক। বর্তমানে শিক্ষার্থীরা স্কুল কলেজে গিয়েও প্রকৃত জ্ঞান তারা অর্জন করতে পারছে না। কেবলমাত্র তারা মুখুস্থ বিদ্যা অর্জন করতে পারলেও হারিয়ে যাচ্ছে নৈতিক শিক্ষা।
নৈতিক শিক্ষার অবক্ষয়ের মূল কারণ হচ্ছে শিক্ষাব্যবস্থার একাডেমিক কার্যক্রম পরিবর্তন। যুগের পরিবর্তনের সাথে তাল মিলিয়ে শিক্ষাব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটলেও নৈতিক শিক্ষার অভাব কিন্তু রয়ে গেছে। ফলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা একপর্যায়ে একাডেমিক পড়াশোনা করেও আদর্শ ক্যারিয়ার গঠন করতে পারছে না। যার ফলে তারা বাধ্য হয়ে বিভিন্ন অপকর্মের সাথে জড়িত হচ্ছে। দুইজন বন্ধু রহিম আর করিম। তারা একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করে। দুজনেই নিজের ক্যারিয়ার গঠন করে ভালো প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছে। এসময় রহিমের মধ্যে নৈতিক শিক্ষা থাকায় সে প্রতিষ্ঠানে সততা, দক্ষতার সহিত কাজ করছে। আবার করিমের মধ্যে নৈতিক শিক্ষা না থাকায়, সে কাজ করছে ঠিকই কিন্তু অর্থ মেরে নিজের পকেট ভর্তি করছে। এই দুই বন্ধুর শিক্ষা কার্যক্রম এক হয়ে থাকলেও একজনের মধ্যে রয়েছে নৈতিক শিক্ষা এবং অপরজনের মধ্যে তা নেই। কেবলমাত্র একাডেমিক শিক্ষার পাশাপাশি ধর্মীয় শিক্ষার জ্ঞান অর্জন না করার ফলে নৈতিক শিক্ষার অবক্ষয় ঘটছে। কবির ভাষায় বর্ণিত: “টিয়া পাখির মতো মুখস্ত করে বড় বড় সার্টিফিকেট অর্জন করে বড় বড় চাকরি পাওয়াকে শিক্ষা বলে না, শিক্ষা হচ্ছে সেটা যা একজন মানুষের ভিতরের কুশিক্ষাকে দূর করে সমাজের পরিবর্তনে এগিয়ে আসার উৎসাহ যোগায়।” রেদোয়ান মাসুদ
তরুণ প্রজন্ম হল আগামীর দেশগড়ার কারিগর। একটি দেশকে সমৃদ্ধ, দারিদ্র ও ক্ষুধা মুক্ত উন্নত দেশ গড়ার লক্ষ্য তরুণ সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। আর এজন্য তরুণদের সৎ, দক্ষ এবং দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে হবে। কিন্তু বর্তমানে অপসংস্কৃতির ভয়ংকর ফাঁদে তরুণ সমাজ মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ছে। ফলে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতেও শিক্ষার্থীদের উপর অপসংস্কৃতির প্রভাব পড়ছে। তরুণরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে শিক্ষার চেয়ে অপব্যবহার করছে বেশি। কেউ কেউ আবার প্রতারণার শিকার হচ্ছে প্রতিনিয়ত। মূলত অশ্লীল দৃশ্য প্রদর্শন করে তরুণদের চরিত্রকে নষ্ট করা হচ্ছে। এতে সমাজে ধর্ষণ, চাদাবাজি, সন্ত্রাসী, ছিনতাই ইত্যাদি বেড়েই চলেছে। এই অপসংস্কৃতির প্রচার বন্ধ না হলে তরুণরা আগামীতে অসুস্থ জাতি হিসেবে সমাজে বোঝা হয়ে দাঁড়াবে। এজন্য সুস্থ্য সংস্কৃতি প্রদর্শন করতে হবে এবং তরুণদের ধর্মীয় জ্ঞান চর্চা করার জন্য উৎসাহিত করতে হবে।
প্রত্যেক মানুষ জন্মগতভাবে স্বাধীন। প্রত্যেকের নিজ নিজ ধর্ম পালনে স্বাধীনতা রয়েছে। ধর্মীয় শিক্ষার ফলে একজন মানুষ উত্তম চরিত্র গঠন করতে পারে। সুতরাং ছাত্রজীবন থেকেই প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিনিয়ত চর্চা করতে হবে। এই অন্ধকার সমাজকে আলোকিত করতে হলে ধর্মীয় শিক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ধর্মীয় শিক্ষার ফলে তরুণরা আলোর পথ খুঁজে পাবে। সুতরাং তরুণদেরকে ধর্মীয় শিক্ষা চর্চার মাধ্যমে এক আদর্শ সমাজ গড়ে তুলতে হবে। তাহলেই নতুন প্রজন্ম নৈতিক শিক্ষায় এগিয়ে যাবে।
লেখক: আহমেদ ইয়াসিন
সাংবাদিক ও গবেষক