স্টাফ রিপোর্টারঃ ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার শিকারীপাড়ার টিকেএম উচ্চ বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের হেনস্তা করার অভিযোগ উঠেছে। ছাত্রীরা বোরখা পরে স্কুলে আসার কারণে দীর্ঘদিন যাবত ছাত্রীদের নানা রকম কথা, বাজে ব্যবহার, গালাগালি, প্রহারের হুমকি ও বিদ্যালয় থেকে বের করে দেয়ার হুমকি দিয়ে আসছে স্কুলের ভারপ্রাপ্ত সহকারী প্রধান শিক্ষক কাজী আব্দুল মুন্নাফ।
একাধিক ছাত্রীর সাথে কথা বলে জানা যায় ছাত্রীদের নানাভাবে বিরক্ত করে আসছেন তিনি। ছাত্রীদের হাতধরা ও চুলে হাত দেয়া থেকে শুরু করে নানা ভাবে হেনস্তা করছেন তিনি। তিনি স্থানীয় আওয়ামী লীগ প্রভাবশালী চেয়ারম্যান সাহেবের বোনের জামাতা হওয়ার কারণে অবিভাবক ও ছাত্রছাত্রীরা ভয়ে এতদিন কিছুই বলেননি। তারা কেউ ঝামেলায় পরতে চাননি বলে জানা যাচ্ছে।
এলাকায় ইতোমধ্যে ব্যাপক কথা চলছে বিষয়টি নিয়ে। একাধিক ছাত্রী বলেছে এই টিচার স্কুলে থাকলে তারা আর স্কুলে যাবে না। কারণ প্রতি সপ্তাহে যখন ছাত্রীরা স্কুলে যায় তিনি অনেক ঝামেলা করেন যা ছাত্রীরা লজ্জায় কিছু বলতে পারে না। কয়েকজন অবিভাবক বলেন, আমাদের হাতপা বাঁধা। তারা প্রভাবশালী, এজন্য কিছু বলতে সাহস পাই না। অভিযুক্ত শিক্ষক কাজী আব্দুল মুন্নাফ ছাত্রীদের বলেন, বোরখা পরে আসতে চাইলে একটা স্কুল বানিয়ে তারপর সেই স্কুলে বোরখা পরে যেতে।
তিনি আরো বলেন, প্রয়োজনে চাকরি ছেড়ে দেবো তবুও তোদের বোরখা পরে ক্লাসে ঢুকতে দেবো না। ছাত্রীরা ভয় পাচ্ছে যদি টেস্ট পরিক্ষায় তাদের আটকে দেয়া হয় এজন্য তারা এতদিন কিছু বলে নি বলেও জানা যায়। বোরখা পরে যারা আসবে তাদের নামের তালিকায় লাল চিহ্ন দিয়ে রাখবে বলে হুশিয়ারি দেন উক্ত শিক্ষক।
তিনি ছাত্রীদের আরো বলেন, বোরখা পরে আসলে ছাত্রদের সামনে দাঁড় করিয়ে রাখবেন। ছাত্রীরা একটা রুমে গিয়ে বোরখা খোলার অনুমতি চাইলে তার সামনেই খোলার নির্দেশ দেন। অন্যদিকে সরেজমিনে দেখা গেছে, ছাত্ররা প্রতিদিন স্কুল ড্রেস ছাড়া স্কুলে আসলেও তাদের কিছু বলা হয় না। উক্ত শিক্ষকের নজর শুধু মেয়েদের দিকে।
যেখানে শুধু এসাইনমেন্ট জমা নেয়া হয় কোভিড ১৯ এর কারণে। গতকাল মঙ্গলবার উক্ত শিক্ষক নিজ হাতে ছাত্রীদের বোরখা খোলতে যায় ও এক ছাত্রীকে থাপ্পড় দিতে এগিয়ে যায়। ছাত্রীরা ব্যাপক উৎকন্ঠিত হয়ে পড়েছে শিক্ষকের এমন খারাপ আচরণের কারণে। তারা তাদের নিরাপত্তা নিয়ে শংকা প্রকাশ করছে। একাধিক ছাত্রছাত্রী তার এই আচরণের বিচার দাবি করছেন।
ভুক্তভোগী এক ছাত্রীর কথা হবুহু তুলে ধরা হলো: ”আমাদের স্কুলে একজন টিচার আছে যে মেয়েদের সাথে অশালীন আচরণ করে । মেয়েদের চুল খুলে দেয় মেয়েদের হাত ধরে কথা বলে । মেয়েদের পিঠে হাত দেয়। বোরকা পরে স্কুলে যাইতে দেয়না বোরকা পড়ে গেলে হিজাব টাইনা খুলে দেয় । গেটের বাইরে থেকে বোরকা খুলে আসতে বলে আমরা কিভাবে খুলবো । স্কুলে কোন কমনরুম নেই। এমনকি কোন টিচার উনার বিরুদ্ধে কিছু বলতে পারে না ।
কেউ কোনো প্রতিবাদ করেন না এনার বিরুদ্ধে। উনি বোরকা পরা মেয়ে দেখলে উল্টাপাল্টা বাজে অনেক কথা বলা শুরু করে দেয়। আর এখন বর্তমানে স্কুল বন্ধ । আমরা স্কুলে যাই অ্যাসাইনমেন্ট আনার জন্য । আমরা বোরকার নিচে স্কুল ড্রেস পড়ে যাই । উনি আমাদের গেটের ঢুকার সাথে সাথে বোরকানিয়ে অনেক আবোল-তাবোল অনেক বাজে কথা বলে। আমাদের কোনো সময় দেই না বোরকা খুলার জন্য। গতকাল ক্লাস টিচারের সামনে আমাদের বোরকা খুলতে হয়েছে।
উনি আমাদের ওই মুহূর্তে বাধ্য করছে। বোরখা খোলার জন্য । প্রতিবাদ করায় উনি আমাদের গায়ে হাত তুলতে আইছে । উনি একজন ভারপ্রাপ্ত অ্যাসিস্ট্যান্ট টিচার । আগে আমাদের যে অ্যাসিস্ট্যান্ট টিচার ছিল তিনি খুব ভালো ছিলেন তিনি আমাদের এরকম কোন কথা বা খারাপ কথা বলত না। আর ওনী আগে থেকেই ওনার অভ্যাস অনেক খারাপ ছিল মেয়েদের গায়ে হাত দিতো বাট এখন লিমিট ক্রস করে গেছে। উনার বিরুদ্ধে কি কোনো প্রতিবাদ করে না।
আমরা প্রতিবাদ করলেও কি আমাদের কথা শুনে না বলে আমরা দেখব এরপর থেকে আর এরকম হবে না। কিন্তু এমন করতে করতে অনেক দিন হয়ে গেছে কিন্তু কেউ এটার কোন বিচার করে না। স্কুলের সভাপতিকে জানানো হইছে উনি বলছে ব্যবস্থা করবেন কিন্তু তারপর উনি বলতেছে তোমরা স্কুলে যাও তোমাদের এখন আর কেউ কিছু বলব না কিন্তু আমাদের স্টুডেন্টদের দাবি আমরা টিচার হিসেবে মানি না ওনাকে স্কুল থেকে বরখাস্ত করা দরকার।
আমাদের বলে তোমাদের টেস্ট পরীক্ষা দিতে দেব না । তোমাদের এডমিট কার্ড দেবো না।তোমরা বোরকা পাঁচটা বোরখা পইড়া আসোগা। তোমাদের পরীক্ষা দিতে দেবো না এমনকি আমাদের অ্যাসাইনমেন্ট ও দেয় নাই । আবার বলে কোন নেতা নিয়ে আসবে নিয়া আইসো তাও বোরকা পরে স্কুলে ঢুকতে দেবো না।
কিন্তু আমরা বোরকার নিচে স্কুল ড্রেস পড়ে যায় এবং স্কুলে যাওয়ার পর পর কাকলি স্কুল ড্রেসটা পড়ে কিন্তু উনি এটা মানতে চায় না। গার্জেনরা কিছু বললে তাদের সাথে তর্ক করে আবার মাঝে মাঝে উনি মানা করে আমি এসব কিছু বলিনাই আমাদের সবার একটাই দাবি এই টিচারকে বহিষ্কার করা হোক স্কুল থেকে । কিন্তু আমাদের কথা কেউ শুনে না।”
ইউনিয়ন: শিকারীপাড়া
উপজেলা:নবাবগঞ্জ,
জেলা:ঢাকা
অন্যদিকে খ্রিস্টান মিশনারী প্রতিষ্ঠান সেন্ট ইউফ্রেজীস বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজে বোরখা পড়ে গেটের ভিতরেই প্রবেশ করতে দেয়া হয় না। এই প্রতিষ্ঠানও নবাবগঞ্জ উপজেলার বান্দুরা ইউনিয়নের হাসনাবাদে অবস্থিত। স্কুল কর্তৃপক্ষ স্কুল প্রতিষ্ঠালগ্ন হতে মেয়েদের সাথে এমন আচরণ করে আসছে।
নবাবগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সিদ্দিক নূরে আলম গণমাধ্যমকে বলেন, অভিযোগ আসা ওই শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি এ ঘটনার জন্য অনুতপ্ত হয়েছেন। তারপরেও আমরা এ ঘটনার তদন্ত করব এবং শিক্ষক মোন্নাফের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।