বরিশাল প্রতিনিধিঃ স্বাধীনতার প্রায় অর্ধশত বছর পেরিয়ে গেলেও মুক্তিযোদ্ধার গেজেটে শামচুল হকের নাম অর্ন্তভূক্ত হয়নি। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি ও গেজেটে অর্ন্তভূক্তের জন্য তিনি জামুকাতে আপিল করেন। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে উপজেলার ক্রমিক নং ১৫ তালিকায় অর্ন্তভূক্ত হন তিনি।
মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহনকারী অনেকেই প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার পরও তালিকায় নাম অর্ন্তভূক্ত করাতে পারেনি। স্বাক্ষী প্রমান থাকলেও তালিকা প্রননয়নকারীদের বিশেষ চাহিদা মেটাতে না পারায় বাদ পরেছেন। এমনই একজন মুক্তিযোদ্ধা বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার ছোট বাশাইল গ্রামের মৃত শাহামুদ্দিন এর ছেলে মো. শামচুল হক (৯৫)। শামচুল হক মুক্তিযোদ্ধা হয়েও স্বাধীনতার ৫১ বছরেও মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় তার নাম অর্ন্তভূক্ত করা হয়নি। বৃদ্ধ শামচুল হক জীবনের শেষ সময়ে তার একটাই দাবী তিনি যেন তার মৃত্যুর আগে মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নাম দেখে যেতে পারেন। তার আপন ছোট ভাই সেকেন্দার বেপারী পাকিস্তানীদের সাথে যুদ্ধে কোটালীপাড়া উপজেলার ঘাঘর নামক স্থানে শহীদ হন। অথচ দুই ভাই একসাথে যুদ্ধে অংশগ্রহন করেও এক ভাই শহীদ হলেও অন্য ভাই মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় তার নাম অর্ন্তভূক্ত করতে পারেননি।
অতি কষ্টে জীবিকা নির্বাহ করে মুক্তিযোদ্ধার প্রাপ্য সম্মান থেকে বঞ্চিত হয়ে শয্যসায়ী রয়েছেন শামচুল হক। তিনি দীর্ঘদিন ধরে নানা রোগে অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। পাঁচ ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে তার।
অভাবেব সংসারে ছেলে-মেয়েরাও তেমন কিছু করতে পারেনি। অবজ্ঞা আর অবহেলায় বঞ্চিত মুক্তিযোদ্ধা শামচুল হককে মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় অর্ন্তভূক্ত করে পরিবারটিকে সরকারি সুযোগ-সুবিধা প্রদানের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন করেছেন তাঁর সন্তানেরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, যুদ্ধের সময় শামচুল হকের বয়স ছিল ৪৪ বছর। এ সময়ে তিনি রেডিওতে ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষন শুনতে পান। যুবক শামচুল হক বঙ্গবন্ধুর ভাষনে উজ্জিবিত হয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহনের সিদ্ধান্ত নেয়। পরিবারের অজান্তেই হেমায়েত বাহিনীর নেতৃত্বে যুদ্ধে যাবার জন্য প্রস্তুতি নেয় তিনি।
৭৫’র ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ঘৃনা এবং ভয়ে শামচুল হক আত্মগোপণে চলে যায়। যদি রাজাকাররা বঙ্গবন্ধুর মত মুক্তিযোদ্ধাদের মেরে ফেলে এমন আশংকা থেকেই আত্মগোপনে চলে যান তিনি। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রননয়ন করা হয়। ওই তালিকায় তার নাম না থাকায় আবেদন করেন তিনি। যার সিরিয়াল নং ১৫/ ডিজি নং ১২৬৯৪৬। এরপর উপজেলা ও জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদে একাধিকবার যোগাযোগ করেও রহস্যজনক কারনে মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় তার নাম অর্ন্তভূক্ত করাতে পারেননি।
শামচুল হক ক্ষোভ ও ভারাক্রান্ত কন্ঠে বলেন, তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করেছেন এমন একাধিক স্বাক্ষি প্রমান থাকা সত্বেও তার নাম তালিকায় অর্ন্তভূক্ত হয়নি। তিনি বলেন, তার সাথে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহনকারী শাহাদাৎ হোসেন, মো. হায়দার আলী হাওলাদার ও মো. ছাদেক সিকদার মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় তাদের নাম অর্ন্তভূক্ত এবং ভাতাভোগী হওয়া সত্বেও আমার নামটি তালিকায় নেই। তিনি জীবনের শেষ সময়ে এসে মুক্তিযুদ্ধের ভাতা চান না, মুক্তিযোদ্ধা
হিসেবে শুধু স্বীকৃতি চান।
বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. হায়দার আলী হাওলাদার জানান, মো. শামচুল হক ১৯৭১ সালে যুদ্ধাক্ষেত্রে হেমায়েত বাহিনীর সাথে বাবুর্চী ও নৌকার মাঝি হিসেবে অংশগ্রহন করেছিলেন। তিনি একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা।
বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহাদাৎ হোসেন জানান, মো. শামচুল হক হেমায়েত বাহিনীতে জহরেরকান্দি এলাকায় প্রশিক্ষণ নিয়ে যুদ্ধে অংশগ্রহন করেন।
এবিষয় উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সহকারী কমান্ডার সিরাজুল হক সরদার মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে স্বীকার করে বলেন, শামচুল হক একজন মুক্তিযোদ্ধা আমরাও তা জানি। কিন্তু স্বাধীনতার ৫১ বছর পেরিয়ে গেলেও তিনি এখন পর্যন্ত তালিকায় নাম অর্ন্তভূক্ত করতে পারেননি। আমরাও চাই শামচুল হককে মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় অর্ন্তভূক্ত করে তার সকল সুযোগ-সুবিধা প্রদানের জন্য।
তার ছেলে মিজান বেপারী জানান, আমার বাবা মুক্তিযুদ্ধের একজন অংশিদার হিসাবে গর্বিত হয়েও স্বীকৃতি পায়নি। আমরা তাঁর সন্তানরা এ দুঃখ আজীবন বয়ে বেড়াতে চাই না। আমরা চাই আমার বাবার মৃত্যুর আগে সে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে যেন স্বীকৃতি পায়।