পটুয়াখালী প্রতিনিধিঃসাজসজ্জার বদলে পটুয়াখালী সদর উপজেলার আউলিয়াপুর ইউনিয়নে বিয়েবাড়িতে চলছে কান্নার রোল। নদীতে গোসল করতে গিয়ে নিখোঁজ হাফেজ এজাজুল ইসলামের (১৯) সন্ধান তিন দিনেও মেলেনি।
সর্বশেষ শনিবার রাত পর্যন্ত কোস্টগার্ডের নিশ্ছিদ্র তল্লাশিতেও খুঁজে পাওয়া যায়নি নদীতে ভেসে যাওয়া ইজাজুলকে।
৩ মার্চ পটুয়াখালী সদর উপজেলার আউলিয়াপুরের মাছুয়াখালী গ্রামে স্কুল সহপাঠী মাসুদ খানের চাচাতো বোন সিফাত জাহান মিতুর বিয়েতে বেড়াতে আসেন তিনি। এর পর লোহালিয়া নদীতে সাঁতার কাটতে গিয়ে ভেসে যান ইজাজুল ইসলাম (২২)।
ইজাজুল কিশোরগঞ্জের করাইল থানার কল্লা গ্রামের মৃত আশ্রাফ আলীর ছেলে। রাজধানীর খান হলান ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। তিনি একজন কোরআনের হাফেজ।
দুর্ঘটনার শিকার মাসুদ খানের খালাতো ভাই শামসুল আলম বলেন, গত ৪ মার্চ মাসুদের চাচাতো বোন সিফাত জাহান মিতুর বিয়ের দিন ধার্য ছিল। বিয়ে উপলক্ষ্যে মাসুদের সহপাঠী ইব্রাহীম খলিল, বাপ্পী, আরিফ, রাবিক, সাকিব, দুলাল এবং নদীতে ভেসে যাওয়া ইজাজুল ঢাকা থকে পটুয়াখালীতে বেড়াতে আসেন। এরা সবাই রাজধানীর খান হলান ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষার্থী এবং মাসুদের সহপাঠী। মাসুদ খান আউলিয়াপুরের মাছুয়াখালী গ্রামের বাসিন্দা নাসির উদ্দীনের ছেলে।
৩ মার্চ দুপুরে সব বন্ধুরা মিলে বাড়ির পার্শ্ববর্তী লোহালিয়া নদীতে গোসল করতে যায়। ওই সাঁতারে বাড়ির ও স্থানীয়রাও অংশ নেয়। কিন্তু মাসুদের বন্ধুরা নদীতে নেমে উৎফুল্ল হয়ে নদীর মাঝখানে চলে যানয়। সাঁতার কাটার একপর্যায় তারা নদীর স্রোতের তীরে ফেরার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন।
পরে যে যার মত তীরে ফিরে আসেন। তবে ইজাজুল তীরে আসতে পারেনি। স্থানীয়রা ইজাজুলকে উদ্ধারের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। ওই সময় দুর্ঘটনার কবলে পরা মাসুদ খান ও ইব্রাহীম খলিল বাপ্পীকে নদী থেকে উদ্ধার করে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়। কিন্তু ইজাজুলকে উদ্ধার করতে পারেনি। ঘটনার পর পর ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল দিনভর নদীতে সন্ধান চালিয়ে ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসে।
পরে শুক্র ও শনিবার কোস্টগার্ডের পৃথক দল ওই নদীতে টানা অভিযান চালায়। শনিবার বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত অভিযান পরিচালনা করে।
কোস্টগার্ডের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ৪-৫ মার্চ লোহালিয়া নদীতে অভিযান পরিচালনা করেছি। এখনও পর্যন্ত ইজাজুলের সন্ধান মেলেনি।
এ বিষয়ে ইজাজুলের বন্ধু মাসুদ খানের চাচা মো. হাবিবুর রহমান বলেন, শুক্রবার থেকে কোস্টগার্ড ইজাজুলকে খুঁজছে, কিন্তু পায়নি। বিয়েবাড়িতে এখনও কান্নার রোল বইছে। ইজাজুলের বাড়ি থেকে তার ভাইবোন ও বোনজামাতা আসছে।
হাবিবুর রহমান আরও বলেন, দুর্ঘটনায় ইজাজুলকে আমরা হারিয়েছি। এর কারণে বিয়েবাড়ির সব আয়োজন স্থবির হয়েছে। বাড়িতে এখনও শুধু লাশ খোঁজা চলছে