পটুয়াখালী প্রতিনিধিঃ পটুয়াখালীর বাউফলে বন্ধুর মেয়েকে গণধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনার ৮ দিন অতিবাহিত হলেও গ্রাম্য মোড়লদের কারণে এখন পর্যন্ত থানায় মামলা করতে পারেনি ধর্ষিতার পরিবার। বিচারের অপেক্ষায় থাকা পরিবারটি এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মদনপুরা ইউনিয়নের জাকির মাতুব্বর (৫৪) তার বন্ধুর সঙ্গে দীর্ঘদিন থেকে গরুর ব্যবসা করেন। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি বিকালে দুই বন্ধু গরু কেনার উদ্দেশ্যে পাশের গ্রামে যান। গরু না কিনে তারা বাড়ি ফিরে আসেন।
গরু কেনার দেড় লাখ টাকা বাসায় রেখে দেন জাকিরের বন্ধু। ওই দিন গভীর রাতে ৩ মুখোশধারী দুর্বৃত্ত কৌশলে ঘরের দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে পরিবারের সবাইকে চেতনানাশক স্প্রে করে অজ্ঞান করে। এরপর মুখোশ খুলে ওই বন্ধুর কিশোরী মেয়েকে প্রাণনাশের ভয় দেখিয়ে তারা ধর্ষণ করে। এ সময় কিশোরী দুইজনকে চিনতে পারে। ধর্ষণের পর ওই ঘরে থাকা নগদ দেড় লাখ টাকা ও প্রায় ১ ভরি স্বর্ণালংকার নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।
পরের দিন ভোরে অচেতন অবস্থায় ধর্ষিতা কিশোরী, তার বাবা, মা, দাদা, দাদি ও ভাবিকে বাউফল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। ঘটনার পর স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল বিষয়টিকে ধামাচাপা দেয়ার জন্য তৎপরতা শুরু করে। বিচারের আশা দিয়ে থানায় মামলা করতে দেয়া হয়নি ধর্ষিতার পরিবারকে। বরং ভবিষ্যতে বিয়ে দেয়ার সমস্যার কথা বলে ধর্ষিতার পরিবারকে মামলা করতে নিবৃত করা হচ্ছে।
রোববার সাংবাদিকদের কাছে পেয়ে ধর্ষিতা কিশোরী জানায়, দুই ধর্ষককে আমি চিনতে পেরেছি। এরা হলো আমার বাবার বন্ধু জাকির মাতুব্বর ও কামাল। অপরজনকে আমি চিনতে পারিনি। ধর্ষিতা কিশোরী স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় অষ্টম শ্রেণিতে লেখাপড়া করে। লোকলজ্জার ভয়ে ধর্ষিতা ঘরের বাইরে বের হতে পারছে না।
এদিকে বিচারের কথা বলে শনিবার ধর্ষিতা ও তার মাকে স্থানীয় নারী ইউপি সদস্য ফাতেমা আক্তার পপির বাড়িতে ডেকে নেন মদনপুরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা। ওই বাড়ি গিয়ে ধর্ষকদের দলবল দেখে ফিরে আসেন ধর্ষিতা ও তার মা।
ইউপি সদস্য ফাতেমা আক্তার পপি বলেন, ধর্ষণের ঘটনা আমি জানি না। তবে চুরির বিষয়টি মীমাংসা করার জন্য ৫ দিন সময় নেওয়া হয়েছে।
মদনপুরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা বলেন, আমি উভয়পক্ষের কথা শোনার জন্য খবর দিয়েছি। আগামী ৫ দিন পর সালিশ মীমাংসা করে দেব। ধর্ষণের ঘটনা সালিশ করতে পারেন কিনা- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ধর্ষণের বিষয়টি আমার জানা নেই। অচেতন করে স্বর্ণালংকার ও টাকা নিয়েছে এ বিষয়টি শুনেছি। এটি ন্যক্কারজনক ঘটনা।
বাউফল থানার ওসি আল মামুন বলেন, এ ব্যাপারে কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।