সকাল থেকেই মুষলধারে বৃষ্টি পড়ছে। এক মুহুর্তের জন্যও থামেনি। তুসিদের দালান বাড়ির সামনে পানি জমে গেছে। এই বৃষ্টিতে আজ আর স্কুল যাওয়া নেই তার। তাই সারাদিন এই রুম থেকে অন্যরুম ঘুড়াঘুড়ি করছে।কখনও মায়ের কাছে গিয়ে বসে থাকে কিছুক্ষন।আবার ছাতা নিয়ে একটু বাহিরে ঘুড়ে আসে। এভাবেই দিনের অর্ধেক সময় পার করে দিল তুসি।
দুপুরের ভাত খেয়ে তুসি উপরের বারান্দায় গেল। বারান্দার গ্রিল ধরে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে সে। কি যেন ভাবছে। আবার শিগ্রই ওর চোখ বেয়ে পানি পড়ছে। কোনো শ্রাবন মনে এলো নাকি ওর? তার স্মৃতিস্বরুপ অশ্রু গড়াচ্ছে। মুহুর্তেই আবার উপর থেকে নিচে নেমে এলো তুসি। এবার সে ছাতা খানা নিয়ে তাদের দালানের পশ্চিম পাশে বাগানে চলে এলো।
বহু যত্ন করে বাগান খানা করেছে তুসি। যদিও তার বাগান করার সামর্থ নেই।মাত্র ছয় বছর বয়স তার। তার মা দারোয়ান আংকেলকে দিয়ে বাগানটি করে দিয়েছে। সব ধরনের ফুলের সমারোহ সেখানে। আহ কি সুভাস!!!
বাগানে যখন তুসি প্রবেশ করল, ঝুম বৃষ্টি শুরু হল। আকাশ পানে চেয়ে তুসি, দুহাত বাড়িয়ে বলছে কিছু আরশের মালিকের কাছে। এই বাগানে শায়িত আছে তার বাবা। অশ্রুজল আর বৃষ্টিজল দুইয়ে মিলে একাকার। চোখ মুছতে মুছতে বাগান থেকে বেড়িয়ে এলো তুসি।
বাগানে শায়িত মানুষটি গত এক বছর আগে কবরবাসি হয়েছে। তিনি রোড এক্সিডেন্টে মারা যান। তাদের তিনজনের ফ্যামিলি ছিল। বাবা ,মা আর তুসি। সেবারের শ্রাবনে তুসির বাবা মটর সাইকেলে অফিসে যাওয়ার সময় বাস চাপায় মারা যায়। সেদিন অনেক বৃষ্টি ছিল। তুসি সেদিন বাবাকে অফিস যেতে নিষেধ করেছিল। কিন্তু সেফটি পোশাকের ভরসায় বাবা অফিসে গিয়েছিল। আর ফিরে আসলেন লাশ হয়ে। তুসির চোখে আজও সেদিনের দৃশ্যগুলি ভেসে ওঠে।
তুসি হাত মুখ ধুয়ে ঘরে গেল। মাগরিবের আযান হচ্ছিল। জায়নামায নিয়ে মাগরিবের সালাত আদায় করল। সালাতের পর বাবার জন্য প্রান ভরে দোয়া করল। সালাত শেষে মায়ের পাশে গিয়ে মন মরা হয়ে বসে রইল তুসি।মা বুঝেছে বাবার শুন্যতা তুসি অনুভব করছে।
পরদিন সকালবেলা। অনেক বৃষ্টি হচ্ছে আজও। তুসির স্কুলে যাওয়ার কোন সম্ভবনা আজ আছে কিনা তা দেখছিল। তুসি তাদের বাড়ির প্রবেশ গেইট দিয়ে বাহিরে তাকালো। এবার সে যা দেখল, তা দেখে সে বসে থাকতে পারল না। মুহূর্তেই সে রাস্তায় বেরিয়ে এলো। যার জন্য তিনি রাস্তায় আসল, তিনি হল রেইনকোট পরিহিত একজন ব্যক্তি। অবিকল তার বাবার মত দেখতে। আর রেইনকোটের রঙ ও তার বাবার রেইনকোটের রঙ যেমন ছিল তেমন। তুসি ভাবল তার বাবা ফিরে এসেছে, আল্লাহ তার কথা শুনেছে। পিছন থেকে দৌড়ে দৌড়ে তুসি বলল,
বাবা, ও বাবা তুমি এসেছো? তুমি এই রেইনকোট আর পড়বে না। চল বাবা ঘরে চল।
-লোকটি অবাক হয়ে বলল , কে তোমার বাবা ? “মামুনী”আমি তোমার বাবা নই।
-তুমিই আমার বাবা। এই যে আমার বাবার রেইনকোট। তুমি চুড়ি করে নিয়ে গেছো।
-“মামুনী”এটা তোমার বাবার রেইনকোটও নয়। আর আমি তোমার বাবাও নই।আমার রেইনকোট তোমার বাবার সাথে মিলে গেছে , তাই বলে আমি তোমার বাবা নই।
– তুসি ভেংগে গিয়ে বলল, অহ তুমি বাবা নয়!!!
এবার তুসি বুঝতে পারল,মৃত মানুষতো কখনো আসেনা। আর আসবেও না। আবার বাবাও আসবেনা। চলে গেছে অনেক দূর। তুসি উর্ধ পানে হাত উঠিয়ে বলল, হে প্রভু আমার বাবাকে তুমি বাগান দিও। আমার বাগানের শুভাস তো তিনি পান না। তোমার বাগান থেকে কিছু শুভাস তুমি তাকে দিও।
কলমেঃ মো. বাদশা
অনার্স তৃতীয় বর্ষ
সরকারি দোহার নবাবগঞ্জ কলেজ।